রবিবার, নভেম্বর ৩, ২০২৪

প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের বোঝা ওয়াসার ঘাড়ে

অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় ওয়াসাকে ডুবিয়েছেন সংস্থাটির এমডি তাকসিম এ খান। টানা ১৫ বছর ধরে এমডি পদে থেকে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে নিজের আখের গুছিয়েছেন তিনি। বিদেশি ঋণের ভারে ডুবতে বসেছে সংস্থাটি। ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ঋণের মধ্যে পড়েছে তারা। ইতিমধ্যে সরকার পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছেন তাকসিম। সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগে তাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে প্রথম বারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর দফায় দফায় তার মেয়াদ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত বছরের আগস্ট সপ্তম বারের মতো ঐ পদে আরো তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। তাকসিমের আমলে ঢাকা ওয়াসায় বৈদেশিক ঋণের টাকায় বড় বড় কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর ফলে ঢাকা ওয়াসাকে ঋণের সুদ ও আসলের কিস্তি পরিশোধে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি এবং বাস্তবায়নের পর তা চালু করতে না পারার মতো কারণে সংস্থাটির ব্যয় বেড়েছে।

পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, তাই ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনার অজুহাতে বড় বড় প্রকল্প নেন তাকসিম। এরপর বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন তিনি। অথচ ২০০৯ সালে যখন দায়িত্ব নেন, তখন গভীর নলকূপের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪০০, বর্তমানে সেই গভীর নলকূপের সংখ্যা সাড়ে ৯০০। অর্থাৎ ভূগর্ভস্থ পানির উৎস আরও বেড়েছে। তবে থেমে নেই তার বড় প্রকল্প। ঢাকাবাসীকে পানির চাহিদা মেটানোর কথা বলে ২০১৯ সালের জুনে ‘পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্প’ উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের সময় জানানো হয়, এই পানি শোধনাগার থেকে প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই পরিমাণ পানি সরবরাহের মতো কোনো রেকর্ড দেখাতে পারেনি ওয়াসা। ওয়াসা কাগজ-কলমে ২৮ কোটি লিটার দেখালেও বাস্তবে পানি সরবরাহ হচ্ছে ২২ কোটি লিটার। ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে মাত্র ২২ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাচ্ছে।

একইভাবে রাজধানীর আফতাবনগরে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা শহরের পয়ঃবর্জ্য পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিয়ে সেখানে শোধন করে বালু নদীতে ফেলা হবে। ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই দাশেরকান্দি পয়ঃবর্জ্য শোধনাগার প্রকল্পের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকার এই প্রকল্পও ড্রেনেজ লাইন নির্মাণের কারণে সুফল দিতে পারছে না। ঢাকা শহরের পয়ঃবর্জ্যের কথা বলা হলেও বাস্তবে নেওয়া হচ্ছে ড্রেনেজের বর্জ্য। এখানেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

গত ১৫ বছরে ঢাকা ওয়াসায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তাকসিম। ওয়াসা আইন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হওয়ার কথা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে পরিচালনা করেছেন তাকসিম। এ নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ঘটনাও ঘটে। পরে অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ায় সরে যেতে হয় সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে। ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করে এখন ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা বেতন ও আনুষঙ্গিক সুবিধা নিচ্ছেন ওয়াসা এমডি।

এদিকে গত রবিবার ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, তাকসিমের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলেই তার ওপর খড়গ নেমে এসেছে। কোনো কারণ প্রদর্শন ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হতো। কয়েক জন আদালতের আদেশ নিয়ে আসার পরও চাকরি করতে দেওয়া হয়নি। কর্মচারী আব্দুল আলিম বলেন, চাকরি স্থায়ী না করে আউটসোর্সিং করা হয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শতকোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন তাকসিম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাকসিম কার্যালয়ে আসছেন না। কোথায় আছেন, কেউ বলতে পারবেন না। এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

 

আরও সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ